বাংলাদেশে বিরোধীদল বিএনপি তাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকে প্যারোলে নয়, নি:শর্ত মুক্তি দেয়ার দাবি জানিয়েছে।
রোববার খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ঢাকায় দলটির গণ-অনশন কর্মসূচি থেকে এই দাবি জানানো হয়।
গত কয়েকদিন ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে বক্তব্য আসছে।
এদিকে, বিএনপির গণ-অনশন থেকে নতুন কোনো কর্মসূচি দেয়া হয়নি। তবে বিএনপির মধ্যম সারির এবং তৃণমুলের নেতা কর্মিরা হরতাল অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি চাইছেন। দলটির নেতৃত্ব কি চাপের মুখে পড়েছে?
কেন প্যারোলে মুক্তি চায় না বিএনপি?
ঢাকায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি গণ-অনশন কর্মসূতিতে দলটির কেন্দ্রীয় এবং মধ্যম সারির অনেক নেতা বক্তব্য রেখেছেন। তাদের সকলেই বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিরোধিতা করেছেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বলেছেন, প্যারোলে নয়, তারা তাদের নেত্রীর নি:শর্ত মুক্তি চান।
দলটির নেতাদের অনেকে মনে করছেন, খালেদা জিয়ার অসুস্থতায় তাদের দাবি অনুযায়ী যে চিকিৎসা করানো হচ্ছে না, সে বিষয়টি তারা বিদেশী কূটনীতিকদের কাছে তুলে ধরেছেন। সেই প্রেক্ষাপটে সরকারের দিক থেকে প্যারোলের কথা বলা হচ্ছে।
বিএনপির অনেক আবার এটাকে সরকারের একটা চাল হিসেবে দেখছেন।
খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে হাসপাতালে নেয়ার পর থেকেই তাঁর মুক্তি পাওয়া না পাওয়ার প্রশ্নে নানা আলোচনা চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।
এরই মাঝে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে বলেছিলেন, বিএনপি নেত্রী যদি প্যারোলে মুক্তির জন্য আবেদন করেন, তাহলে তা যাচাই করে আইনগত দিক খতিয়ে দেখে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।
মি: খানের এই মন্তব্যের প্রেক্ষাপটে প্যারোলে মুক্তি নিয়ে আলোচনা সামনে আসে।
যদিও সর্বশেষ রোববার আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি দেয়ার পরিস্থিতি হয়নি।
এই আলোচনায় গত কয়েকদিনে বিএনপি নেতারা এনিয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে বেশ সতর্ক ছিলেন বলে মনে হয়েছে।
তবে দলটির গণ অনশন কর্মসূচিতে এর বিরোধিতা এলো জোরালোভাবে।
বিএনপি নেতা মি: আলমগীর বিবিসিকে বলেছেন, প্যারোলের বিষয়ে তাদের দলে কোনো আলোচনা নেই।
“আমাদের দল থেকে প্যারোলের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। আমরা এ বিষয়ে কোনো কথাও বলিনি। এখন পর্যন্ত সরকার আমাদের সেভাবে আলোচনার জন্য বলেননি। এবং তাঁর স্বাস্থ্যের ব্যাপারে যতটুকু আমরা চেয়েছি, সেটাওতো আমরা পাইনি। আমরা সব সময়ই সব বিষয়ে একটা আলোচনার মধ্য দিয়ে এসেছি। কিন্তু দু:খজনক হলো, সরকারই সেটা এড়িয়ে যায়। ফলে আন্দোলন ছাড়াতো বিকল্প নাই।”
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দুর্নীতির যে দু’টি মামলায় তাঁর ৭ এবং ১০ বছরের সাজা হয়ে রয়েছে, সেই মামলা দু’টিতে আপিল বিভাগ থেকে এখনও জামিন হয়নি।
আরও কয়েকটি মামলাতেও তাঁর জামিন নেই।
বিএনপি নেতাদের অনেকে আইনগতভাবে জামিনের মাধ্যমে তাদের নেত্রীর মুক্তি চাইছেন।
দলটির নেতাদের অনেকে আবার মনে করছেন, সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে না চাইলে খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়। তারা বলছেন,তাদের নেত্রীর মুক্তির জন্য কোনো শর্ত এলে প্রয়োজনে বিএনপির নির্বাচিত ছয়জন সংসদে যেতে পারেন। তাদের কারও কারও মধ্যে এমন আলোচনা রয়েছে।
কিন্তু বিএনপির গণ-অনশনে অংশ নেয়া তৃণমুলের কয়েকজন বলছিলেন, আন্দোলন ছাড়া তারা বিকল্প দেখেন না।
তাদের মধ্যে একজন নারী নেত্রী বলেছেন, “এ সরকার ভাবছে, বিএনপি দুর্বল আন্দোলন করতে পারবে না। সেজন্য আমাদের নেত্রীকে মুক্তি দিচ্ছে না। কিন্তু আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা সফল হবো।”
মাঠ পর্যায়ের আরেকজন নারী নেত্রী বলছিলেন, “সংগ্রাম ছাড়া কোনো বিকল্প নাই। সংগ্রাম করা ছাড়া নেত্রীকে মুক্ত করা যাবে না। ফলে নেতাদের এখনই কঠোর কর্মসূচি নিতে হবে।”
ঢাকায় গণ-অনশনে কেন্দ্রীয় এবং মধ্যম সারির নেতা যারা বক্তব্য দিয়েছেন,তাদের প্রায় সকলেই হরতাল অবরোধের মতো কর্মসূচি নিয়ে এখন মাঠে নামার জন্য নেতৃত্বের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
সেখানে গণ-অনশনেও যে সেভাবে জমায়েত হয়নি, সে বিষয়টির সাথে সাংগঠনিক দুর্বলতার কথাও দলটির নেতাদের অনেকে তুলেছেন।
তৃণমুল বা মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মিদের থেকে দলটির নেতৃত্ব একটা চাপের মধ্যে পড়েছে, সেটা বলা যায়।
তবে মি: আলমগীর বলেছেন, মাঠ পর্যায়ের আবেগ তারা বিবেচনায় নিচ্ছেন। এরপরও বড় কোনো কর্মসূচিতে যেতে তাদের সময় প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
“গণতান্ত্রিক যে উপায়গুলো আছে প্রতিবাদ করার, সেগুলো থেকেতো আমরা বঞ্চিত হয়ে গেছি। এর মধ্যেই যতটুকু সুযোগ পাওয়া যায়, সেটুকু আমরা নেয়ার চেষ্টা করছি।আমাদের মুল লক্ষ্য হচ্ছে এখন বেগম জিয়ার মুক্তির বিষয়টা নিয়ে এগুনো। কারণ উনি না থাকলে গণতান্ত্রিক আন্দোলনটা সেভাবে গড়ে উঠবে না। উনি সামনে থাকলে সেটা গড়ে উঠবে। সেজন্য আমরা আন্দোলন গড়ে তুলবো।”
“কিন্তু আমরা একটু সময় নিয়ে সাংগঠনিক শক্তিটা তৈরি করে জনগণকে সাথে নিয়ে আমরা নামতে চাই।”
বিএনপির এই গণ-অনশনে তাদের দুই জোটে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং ২০ দলের শরিকদলগুলোর অনেক নেতা উপস্থিত হয়ে সংহতি প্রকাশ করেছেন।
সূত্র, বিবিসি